দখিনের খবর ডেক্স ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ১৯৮তম এবং ২০১৮ সালের ২৭তম মন্ত্রিসভা বৈঠকেই বদলে যাচ্ছে মন্ত্রীদের হাতে থাকা কালো রংয়ের ব্রিফকেস। বুধবার (৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠেয় বৈঠকে মন্ত্রীদের হাতে থাকবে সোনালী আঁশ নামে খ্যাত পাটের তৈরি সোনালী রংয়ের ব্রিফকেস। ইতোমধ্যেই পাটের তৈরি ব্রিফকেসে বৈঠকের আলোচ্যসূচিসহ সব ডকুমেন্টস মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারের একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন হ্যাঁ, কালো চামড়ায় তৈরি নয়, সোমবার (১ অক্টোবর) দুপুরের পর পাটের তৈরি ব্রিফকেসে কেবিনেট ফোল্ডার পেয়েছি। খুলে দেখেছিও। সত্যি, ব্রিফকেসটি খুবই সুন্দর। পছন্দ হওয়ার মতো।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘৭০টি ব্রিফকেস পেয়েছি। তবে সবগুলো প্রয়োজন হয়নি। রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) থেকেই নতুন ব্রিফকেসগুলো তৈরির কাজ শুরু করেছি। সোমবার দুপুরের পর থেকেই তা মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে সরকারের ১৯৬তম মন্ত্রিসভা বৈঠক। সপ্তাহের প্রতি সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার রীতি থাকলেও গত ২৪ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর এই দুই সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এসময় নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগাদান শেষে সোমবার (১ অক্টোবর) দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই বুধবার (৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সপ্তাহের মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক।
মন্ত্রিসভা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের আলোচ্যসূচিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সব ধরনের ডকুমেন্টস মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছাতে ব্যবহার হতো কালো রংয়ের চামড়ায় তৈরি ব্রিফকেস, যা কেবিনেটের ফোল্ডার নামে পরিচিত। আর সেই ব্রিফকেস হাতে নিয়েই মন্ত্রীরা কেবিনেট বৈঠকে অংশ নিতেন। এখন থেকে (বুধবার ৩ অক্টোবর থেকে) আর কালো রংয়ের ব্রিফকেস নয়, ব্যবহার হবে পাটের তৈরি সোনালী রংয়ের ব্রিফকেস। এবার মন্ত্রীরা পাটের তৈরি সোনালী রংয়ের ব্রিফকেস হাতে নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে হস্তান্তর করা হয় পাটের তৈরি সোনালী রংয়ের ব্রিফকেস। ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী ৭০টি ব্রিফকেস তুলে দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের হাতে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, ‘পাটের বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবেই পাট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ ব্রিফকেস। এটি সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে। এই ব্রিফকেসের রং ও ডিজাইন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে। ব্রিফকেসের রং ও ডিজাইন দুটোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দ হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে এই ব্রিফকেসগুলো মন্ত্রিসভা বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের নিজস্ব উদ্যোগে এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ৭০টি ব্রিফকেস উপহার হিসেবে দিয়েছেন তিনি।
সূত্র জানায়, প্রচলিত কালো ব্রিফকেসের সাইজেই প্রস্তুত করা হয়েছে নতুন ব্রিফকেস। তবে নতুন ব্রিফকেসের উভয় পিঠ পাটের তৈরি মোটা কাপড় দিয়ে মোড়ানো। ব্রিফকেসের হাতল ও চার পাশের বর্ডার পাটের রংয়ের চামড়া দিয়ে মজবুত করা হয়েছে। প্রথা ভাঙা হলেও দেখতে চমৎকার ও আকর্ষণীয় নতুন আদলের এই ব্রিফকেসের প্রতি মন্ত্রীদের আগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, কালো চামড়ায় তৈরি ব্রিফকেসের তুলনায় পাটের আঁশে তৈরি ব্রিফকেসের দামও হবে তুলনামূলক অনেক কম। আপাতত প্রতিটি ব্রিফকেস তৈরিতে সম্ভাব্য খরচ হতে পারে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম নিজের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া নতুন ডিজাইনের একটি ব্রিফকেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখান। মন্ত্রিপরিষদের সব মন্ত্রীকে একটি করে এমন ব্রিফকেস উপহার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মির্জা আজমের হাতে থাকা ব্রিফকেসটি মনোযোগ সহকারে দেখেন এবং তা পাশে উপবিষ্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেখানোর জন্য তার হাতে দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার স্বভাবসুলভ হাসিভরা মুখে ব্রিফকেসটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন। সূত্র জানায়, ব্রিফকেসটি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী উভয়েরই পছন্দ হয়েছে এবং তারা দুজনই পাটের এই বহুমুখী ব্যবহার দেখে খুশি হয়েছেন। পাট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ অনুযায়ী পাটের তৈরি ব্রিফকেস তৈরি ও তা হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবারের বৈঠকের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করলো পাটের তৈরি ব্রিফকেস।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্মসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রতিবছরই মন্ত্রীদের জন্য কালো চামড়ার ব্রিফকেস কেনা হয়, যা আসলেই খুবই ব্যয়বহুল। সেদিকটি বিবেচনায় নিলে পাটের তৈরি ব্রিফকেসটি যেমন সাশ্রয়ী, তেমনই কার্যকরী হবে।
Leave a Reply